আজ শুক্রবার মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মাতৃভাষা আন্দোলনের ৭৩ বছরে ‘মেক ল্যাঙ্গুয়েজ কাউন্ট ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার পালিত হচ্ছে দিবসটি।
মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে ভাষা শহীদদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগকে স্মরণ করবেন জাতি। দিবসটি উপলক্ষে অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাণী দিয়েছেন। নেওয়া হয়েছে নানান কর্মসূচি।
একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটি। এদিন দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত এবং কালো পতাকা উত্তোলন করা হবে। দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানান কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তারপর প্রধান বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং পরে সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা জানান।
এ ছাড়া কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি নিয়ে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে।
আজিমপুর কবরস্থানে সুরা ফাতিহা পাঠ ও কোরানখানির আয়োজনসহ দেশের সব উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদপত্রগুলোতে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হচ্ছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো একুশের বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে।
মহান শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দেশ ও দেশের ভাষাগুলোর মর্যাদা রক্ষায় নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, যা দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনের একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়। আমি এই দিনে সব শহীদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।
বিএনপির কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আজ ভোর ৬টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ এবং কালো পতাকা উত্তোলন, বলাকা সিনেমা হলের সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের জমায়েত এবং আজিমপুর কবরস্থানে ভাষা শহীদদের মাজার জিয়ারত শেষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অভিমুখে যাত্রা এবং শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।
এ ছাড়া সারা দেশে দলটির বিভিন্ন ইউনিট নানা কর্মসূচি পালন করবে।
আলোচনা সভা ও দোয়ার মাধ্যমে মহান ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস’ পালন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এক বিবৃতিতে বলা হয়, দেশবাসী আজ এমন এক সময় ভাষা দিবস পালন করতে যাচ্ছে যখন সবেমাত্র দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকারার্থে স্বাধীনতার স্বাদ পেতে শুরু করেছে।
দিবস উপলক্ষে ‘ভাষা আন্দোলন থেকে চব্বিশের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান: বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পুনর্গঠনের ঐতিহাসিকতা’ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। আজ বিকাল সাড়ে ৪টায় বাংলামোটরের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হবে।
এদিকে দিবস উপলক্ষে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শহীদ মিনার এলাকা পরিদর্শন শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, শহীদ মিনার এলাকায় কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ৪ স্তরের নিরাপত্তার বলয় তৈরি করা হয়েছে।
১৯৫২ সালের এই দিনে ‘বাংলা’কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের ছাত্র ও যুবসমাজসহ সর্বস্তরের মানুষ সে সময়ের শাসকগোষ্ঠীর চোখ-রাঙ্গানি ও প্রশাসনের ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে আসে। মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে দুর্বার গতি পাকিস্তানি শাসকদের শঙ্কিত করে তোলায় সেদিন ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম, রফিক উদ্দিন আহমদ, শফিউর রহমানসহ আরো অনেকে প্রাণ হারান।
১৯৫৬ সালে বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পায় এবং ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এই দিনে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ফলে ২০০০ সাল থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে দিবসটি বিশ্বজুড়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপন করে আসছে।