বিশ্বের মাঝে একটি সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ। যেখানে তরুণ প্রজন্ম দেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা লালন করে। এই দেশকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে।
দেশের যেকোনো প্রান্তে মানবতাবিরোধী কিংবা সামাজিক বিচ্যুতিতে তারা কষ্ট পায়। আবার কোথাও কোনো খুশির সংবাদে তাদের চোখ দুটো আনন্দাশ্রুতে ভরে ওঠে। এই তরুণ প্রজন্ম নিজ নিজ জায়গা থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু করতে উদ্যমী হয়।
কোটা সংস্কার কেন্দ্র করে তারুণ্যের সাহসী প্রতিবাদী চরিত্র তারই অনন্য উদাহরণ, যা এনেছে অবিশ্বাস্য সফলতা। ছাত্র-জনতার জীবনের ত্যাগে দীর্ঘ সময়ের একক কর্তৃত্বের অবসান, শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। তৈরি হয় নতুন এক ইতিহাস। নতুন করে আরেকবার স্বাধীনতার স্বাদ অনুভব করে দেশের মানুষ।
এই তরুণ প্রজন্মই আমাদের শক্তি। আমাদের স্বপ্ন আমাদের প্রেরণা। যখন ওরা বিশ্বের নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে নিজেদের সেরাটা দিয়ে পুরস্কার পায়, এই তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে নতুন কোনো কিছু উদ্ভাবন করে, গরিব-অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করে, দেশের সম্মানের প্রশ্নে জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে, পত্রিকা কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় এই তরুণ প্রজন্মের ভালো কাজের খবরে আমাদের বড্ড ভালো লাগে। আহ্লাদিত হই। আশাবাদী হই।
আমাদের তরুণ প্রজন্মরা বিশ্বের যেকোনো উত্থান-পতনের সঙ্গে শরিক হতে চায়। এই অসুস্থ সমাজে বাস করেও এরা সুস্থ, সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখে। যখন হাত বাড়ালেই নেশার দ্রব্য সহজেই পাওয়া যায়, একটু এদিক-ওদিক হলেই খারাপ পথে যাওয়া যায়, তবুও তারা নিজেদের ভালোর পথে রাখতে সদা তৎপর। ওদের এগিয়ে যাওয়ার পথে শত্রুরা দমিয়ে রাখতে চেষ্টার কমতি করছে না। শত্রুরা ওদের অলস ও নিষ্কর্মা বানাতে চায়, ওদের চলার পথে নানা ভয় প্রদর্শন করে। ভয় দেখাতে চায়। সব বাধাকে ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে এই তারুণ্য তৈরি করে নতুন ইতিহাস। তারুণ্যের কাছে নিয়তিও হার মানে বলে মন্তব্য করেছিলেন কবি আল মাহমুদ। অন্যদিকে তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য ‘তারুণ্য’ কবিতায় লিখেছেন, ‘তারুণ্যের প্রত্যেক আঘাতে কম্পমান উর্বর-উচ্ছেদ।
অশরীরী আমি আজতারুণ্যের তরঙ্গের তলে সমাহিত উত্তপ্ত শয্যায়। ক্রমাগত শতাব্দীর বন্দী আমি অন্ধকারে যেন খুঁজে ফিরি অদৃশ্য সূর্যের দীপ্তি উচ্ছিষ্ট অন্তরে।’
এ দেশের তরুণদের ইতিহাসসমৃদ্ধ। তারা ভাষা আন্দোলন করেছে, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে হাজির হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধে দেশের জন্য লড়েছে, স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বুক পেতে দিয়েছে।
সর্বশেষ শেখ হাসিনা সরকারের পতনও তাদের আন্দোলনের ফসল। তবে এই আন্দোলনেই এক হয়েছে তারুণ্য, তা নয়। হাসিনা সরকারের আমলে আরো নানা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করেছে তারা। তখনও হামলা-মামলার শিকার হতে হয়েছে।
২০১৬ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ‘নো ভ্যাট’ আন্দোলন কিংবা ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলন, একই বছর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্দোলনে সরকার পুলিশ বাহিনী এবং দলীয় ক্যাডার, বিশেষ করে ছাত্রলীগের হেলমেট বাহিনী দিয়ে নির্মম নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে তরুণ ছাত্রসমাজের ওপর।
দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল গঠন, বিরোধী মতাদর্শের ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের ক্যাডারদের পৈশাচিকতা সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক ছাত্র চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেছে।
২০১২ সালে পুরান ঢাকায় ছাত্রলীগের পৈশাচিক হত্যার শিকার বিশ্বজিৎ দাস এবং ২০১৯ সালে বুয়েটছাত্র আবরার হত্যাকাণ্ডের কথা দেশবাসী ভুলে যায়নি।
আমাদের তারুণ্য সব বাধাকে ধুলোর সঙ্গে মিশিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। কাঙ্ক্ষিত ভোর ছিনিয়ে আনতে চায়। শপথ নেয়, এই তরুণ প্রজন্ম বেঁচে থাকতে কেন দেশ কাঁদবে? কেন না খেয়ে মরবে? কেন বিনা বিচারে অপরাধীরা দিব্যি ঘুরে বেড়াবে? কেন নির্যাতিত অসহায়দের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হবে? কেন অসহায় মা-বোনগুলো নিজেদের ইজ্জতহানির ভয় করবে? এসব কেন হবে? এই ‘কেন’ প্রশ্নটা সর্বদা তরুণ প্রজন্মকে তাড়িয়ে বেড়ায় ওরা হাল ধরতে চায়।
স্বপ্নিল দেশ গড়তে ওদের জেগে ওঠা খুবই জরুরি। কাজী নজরুল ইসলামের মতো বলতে হয়, ‘শির নেহারি’ আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির।’