হাসিনার লাঠিয়াল হানিফের যত সাংবাদিক নির্যাতন

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ১০:৫৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৮৭ বার পঠিত হয়েছে

সাংবাদিকের রক্তেভেজা জনপদ কুষ্টিয়া। ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আমল ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য এক ভীতিকর সময়। সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকতেন সাংবাদিকরা। ফ্যাসিবাদী দলটির পাণ্ডারা সামান্যতম সমালোচনাও সহ্য করত না।

হামলা-মামলার ভয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে কেউ কলম ধরার সাহসও করত না। জুলুম, অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কোনো সাংবাদিক কলম ধরার চেষ্টা করলেই তার ওপর হামলা হতো, নয়তো মামলা দিয়ে ফাঁসানো হতো। এমনকি সাংবাদিককে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে। আদালত চত্বরে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আর এসবই হয়েছে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে। আওয়ামী ক্যাডারদের ভয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক কুষ্টিয়াও ছেড়ে চলে গেছেন।

১৬ বছরে সাংবাদিকদের ওপর যত হামলা-মামলা

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক জুলুম-নির্যাতন নেমে আসে। ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত ১৬ বছরে আওয়ামী শাসনকালে হানিফ ও তার অনুসারীদের রোষানলে পড়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন অন্তত দুই ডজন গণমাধ্যমকর্মী। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর কুষ্টিয়ার দুই সংসদ সদস্যের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় প্রথম মামলা হয় সমকাল প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানার বিরুদ্ধে। পরবর্তী সময়ে হানিফ ও তার ভাই আতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করায় হানিফের অনুগত স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লবকে দিয়ে থানায় সাজ্জাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করা হয়। থানায় ওসির রুমে বিপ্লব তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হামলা করে সাজ্জাদ রানার ওপর। এর কয়েক বছর পর থানাপাড়া এলাকায় টেন্ডার-সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় একুশে টিভির প্রতিনিধি জহুরুল ইসলামের ওপর হামলা হয়। এছাড়াও হানিফের দোসরদের দায়ের করা মামলায় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী এখনও সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দিচ্ছেন। তারা হলেন বাংলাভিশনের হাসান আলী, যমুনা টেলিভিশনের (বর্তমানে রাজশাহীতে সময় টেলিভিশনে কর্মরত) মওদুদ রানা, স্থানীয় সাংবাদিক আসলাম আলি, মুন্সি শাহিন আহমেদ জুয়েল ও অঞ্জন শুভ। তাদের অধিকাংশই জেলে গেছেন। হয়রানির মুখে টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে কুষ্টিয়া ছেড়ে রাজশাহী চলে যান সাংবাদিক মওদুদ রানা।

ফ্যাসিস্ট হানিফের অন্যতম ক্যাশিয়ার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামের অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করায় জেলে গেছেন স্থানীয় দিনের খবর পত্রিকার সাংবাদিক ও বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি এএম জুবায়েদ রিপন এবং স্থানীয় মাটির ডাক পত্রিকার সম্পাদক লুৎফর রহমান কুমার। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সন্তুষ্ট করতে মাহবুব-উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষারকে দিয়ে আমার দেশ পত্রিকার মজলুম সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করায়। ২০১৮ সালে ২২ জুলাই ওই মামলায় হাজিরা দিতে এলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হানিফ তার ক্যাডারদের দিয়ে প্রকাশ্যে আদালতে চত্বরে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয়। আর তাদের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও কথিত সাংবাদিক নেতা রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব। আমার দেশ সম্পাদক রক্তাক্ত হলেও তার সাহায্যে পুলিশ এগিয়ে না এসে উল্টো হামলাকারীদের সহায়তা করেছিল। হানিফ আগের দিন রাতে নেতাকর্মীদের মজলুম সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানকে হত্যার নির্দেশ দেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যুবলীগ নেতা জানিয়েছেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১০ অক্টোবর আমার দেশ সম্পাদক এ বিষয়ে থানায় মামলা করেন। অথচ এ মামলার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও একজন আসামিও গ্রেফতার হয়নি।

আমার দেশ সম্পাদকের দায়ের করা মামলার অগ্রগতি জানতে গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। পরে মোবাইলে আমার দেশ-এর পরিচয় দিয়ে খুদেবার্তা পাঠালেও তার উত্তর দেননি পুলিশ সুপার।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের দুর্নীতি নিয়ে নিউজ করায় স্থানীয় সাংবাদিক মুন্সি শাহিন আহমেদ জুয়েল ও অঞ্জন শুভর নামে মামলা দেওয়া হয়। হানিফের স্বার্থে আঘাত করায় তাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মামলা দেওয়া হয়। এছাড়া হানিফের পরিচিতজনের অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মুন্সি শাহীন আহমেদ জুয়েল ও গ্লোবাল টিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সনি আজিম এখনো হাজিরা দিচ্ছেন খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটলেও বিচার হয়নি কোনো ঘটনার।

২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন ছয় সাংবাদিক। এ সময় তাদের স্পিডবোট থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে বালু উত্তোলনকারী আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান মণ্ডলের পোষা সন্ত্রাসীরা। সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিজ বাড়িতে ঢোকার সময় হামলার শিকার হন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম সোহাগ। দৌলতপুরের তৎকালীন সংসদ সদস্যের পিএসের দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহের পরদিনই হামলার শিকার হন তিনি।

জানা গেছে, মাহবুব-উল আলম হানিফের ইশারায় তার অনুগতরা সাংবাদিকদের দমন করতে মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে বারবার। এমনকি হানিফের তোষামোদকারী কতিপয় সাংবাদিক নামধারী দলীয় ক্যাডারকে দিয়ে মিডিয়ার মালিক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং করানো থেকে শুরু করে পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার নজিরও আছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা অথবা মামলার ক্ষেত্রে পুলিশও সহায়তা করেছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতা, শেখ হাসিনার বেয়াই মাহবুব-উল আলম হানিফ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ভয়ে জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা সব সময় তটস্থ থাকতেন।

এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক হাসান আলী দৈনিক টার্গেটকে বলেন, বিগত আওয়ামী সরকার ও দলটির নেতা এবং পুলিশের বিভিন্ন দুর্নীতি-অপকর্মের নিউজ ও অপকর্মের খোঁজ-খবর নেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে অন্যজনকে দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করায় এবং আমাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, এই সরকারের কাছে আমাদের দাবি- এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক। ২০১৭ সাল থেকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ও খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ঘুরতে ঘুরতে আমরা ক্লান্ত। একইসঙ্গে সরকারের কাছে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুষ্ঠু কর্মক্ষেত্র তৈরির দাবি করেন তিনি।

সাংবাদিক মুন্সী শাহিন আহমেদ জুয়েল দৈনিক টার্গেটকে বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আমার সম্পাদনায় পরিচালিত ‘ভয়েজ অব কুষ্টিয়া’ নামের নিউজ পোর্টালে নিউজ করি। ওই নিউজ করার পর মাহবুব-উল আলম হানিফ ও তার ভাই আতার রোষানলে পড়ি আমরা। সম্ভবত ২০২১ সালের করোনাকালে ওই নিউজ প্রকাশিত হয়। তদন্ত শেষে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি ১২ বিষয়ে অনিয়ম চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। বিভিন্নভাবে তিনটি মামলা হয় আমাদের বিরুদ্ধে। একটি মামলায় আমরা দুজন ২১ দিন কারাগারে ছিলাম। পরে হানিফ-ঘনিষ্ঠ বন্যা খাতুন আয়াতের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিউজ করি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হানিফ কথিত সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লবের মাধ্যমে আমার (জুয়েল) ও সাংবাদিক সনি আযমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করায়। ওই মামলায় এখনো খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে হাজিরা দিচ্ছি আমরা। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্টের পতনের পর এই সরকার সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে বলে আমরা আশা করি।

সাংবাদিক গুম ও হত্যা

২০২২ সালের ৩ জুলাই রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড় এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার। পরে ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় নির্মাণাধীন শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচে গড়াই নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রুবেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পরনের জামা-কাপড় ও মানিব্যাগে থাকা পরিচয়পত্র দেখে লাশ শনাক্ত করে পরিবারের লোকজন। ৮ জুলাই রুবেলের দাফন শেষে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের করেন রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান। মামলাটি আজও পুলিশের খাতায় ক্লুলেস! তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হানিফের ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য জেনে যাওয়ায় সংবাদ প্রকাশের আগেই রুবেলকে হত্যা করা হয়। আর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আলোচিত ওই হত্যা মামলার বিষয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে দৈনিক টার্গেটকে তার চাচা মিজানুর রহমান জানান, দীর্ঘদিনেও মামলাটির কোনো অগ্রগতি হয়নি। রুবেল হত্যার সঙ্গে কুষ্টিয়ার তৎকালীন সরকারি দলের অনেক বড় নেতা জড়িত। সরকার বদলেও আতঙ্কের কারণে সেটা এখনও প্রকাশ করা যাচ্ছে না। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

নাটের গুরু হানিফ

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ মুখে মিডিয়ার স্বাধীনতার কথা বললেও শুরু থেকেই কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের টুটি চেপে ধরেছিলেন। উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়ম ও দলীয় কোনো নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলেই অনুগতদের দিয়ে মামলা ঠুকে দিয়ে জেলে ভরার ব্যবস্থা করতেন তিনি। এমনকি সাংবাদিকদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রেখে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন এই নেতা। কেউ কেউ নির্যাতনের ভয়ে তার বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতেন। তার প্রশংসা করে বক্তব্য রাখতেন। তার ও তার অনুগতদের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করলেই জামায়াত-বিএনপি তকমা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হতো। এমন ঘটনা অহরহ ঘটেছে। হানিফ দলবাজ সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে চলতেন। এর বাইরে অন্য সাংবাদিকদের শত্রু হিসেবে মনে করতেন। তাই প্রতিটি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত আছে বলে ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগ। হানিফ ও তার ভাই আতা বর্তমানে পলাতক থাকায় তাদের মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হানিফের অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. আমিনুল হক রতন দৈনিক টার্গেটকে বলেন, ’আপাতত এই মূহুর্তে আমরা মন্তব্য করতে চাই না। আমরা এখন একটা কান্তিকাল কাটাচ্ছি।’

শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্যে বিক্ষিপ্ত ছাত্র-জনতার তোপে নিরাপত্তায় বঙ্গভবন

হাসিনার লাঠিয়াল হানিফের যত সাংবাদিক নির্যাতন

প্রকাশ: ১০:৫৬:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪

সাংবাদিকের রক্তেভেজা জনপদ কুষ্টিয়া। ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী আমল ছিল গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য এক ভীতিকর সময়। সরকারি দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকতেন সাংবাদিকরা। ফ্যাসিবাদী দলটির পাণ্ডারা সামান্যতম সমালোচনাও সহ্য করত না।

হামলা-মামলার ভয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজির বিরুদ্ধে কেউ কলম ধরার সাহসও করত না। জুলুম, অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কোনো সাংবাদিক কলম ধরার চেষ্টা করলেই তার ওপর হামলা হতো, নয়তো মামলা দিয়ে ফাঁসানো হতো। এমনকি সাংবাদিককে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনাও ঘটেছে। আদালত চত্বরে দেশের অন্যতম প্রভাবশালী পত্রিকার সম্পাদককে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত করা হয়েছে। আর এসবই হয়েছে আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতে। আওয়ামী ক্যাডারদের ভয়ে বেশ কয়েকজন সাংবাদিক কুষ্টিয়াও ছেড়ে চলে গেছেন।

১৬ বছরে সাংবাদিকদের ওপর যত হামলা-মামলা

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক জুলুম-নির্যাতন নেমে আসে। ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, গত ১৬ বছরে আওয়ামী শাসনকালে হানিফ ও তার অনুসারীদের রোষানলে পড়ে হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন অন্তত দুই ডজন গণমাধ্যমকর্মী। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর কুষ্টিয়ার দুই সংসদ সদস্যের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় প্রথম মামলা হয় সমকাল প্রতিনিধি সাজ্জাদ রানার বিরুদ্ধে। পরবর্তী সময়ে হানিফ ও তার ভাই আতার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করায় হানিফের অনুগত স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লবকে দিয়ে থানায় সাজ্জাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করা হয়। থানায় ওসির রুমে বিপ্লব তার ক্যাডার বাহিনী নিয়ে হামলা করে সাজ্জাদ রানার ওপর। এর কয়েক বছর পর থানাপাড়া এলাকায় টেন্ডার-সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় একুশে টিভির প্রতিনিধি জহুরুল ইসলামের ওপর হামলা হয়। এছাড়াও হানিফের দোসরদের দায়ের করা মামলায় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী এখনও সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজিরা দিচ্ছেন। তারা হলেন বাংলাভিশনের হাসান আলী, যমুনা টেলিভিশনের (বর্তমানে রাজশাহীতে সময় টেলিভিশনে কর্মরত) মওদুদ রানা, স্থানীয় সাংবাদিক আসলাম আলি, মুন্সি শাহিন আহমেদ জুয়েল ও অঞ্জন শুভ। তাদের অধিকাংশই জেলে গেছেন। হয়রানির মুখে টিকতে না পেরে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে কুষ্টিয়া ছেড়ে রাজশাহী চলে যান সাংবাদিক মওদুদ রানা।

ফ্যাসিস্ট হানিফের অন্যতম ক্যাশিয়ার জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী রবিউল ইসলামের অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে সংবাদ প্রকাশ করায় জেলে গেছেন স্থানীয় দিনের খবর পত্রিকার সাংবাদিক ও বর্তমানে দৈনিক যুগান্তর প্রতিনিধি এএম জুবায়েদ রিপন এবং স্থানীয় মাটির ডাক পত্রিকার সম্পাদক লুৎফর রহমান কুমার। ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে সন্তুষ্ট করতে মাহবুব-উল আলম হানিফ কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ইয়াছির আরাফাত তুষারকে দিয়ে আমার দেশ পত্রিকার মজলুম সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করায়। ২০১৮ সালে ২২ জুলাই ওই মামলায় হাজিরা দিতে এলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে হানিফ তার ক্যাডারদের দিয়ে প্রকাশ্যে আদালতে চত্বরে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার দেশ সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা চালানো হয়। আর তাদের সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগ নেতা ও কথিত সাংবাদিক নেতা রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব। আমার দেশ সম্পাদক রক্তাক্ত হলেও তার সাহায্যে পুলিশ এগিয়ে না এসে উল্টো হামলাকারীদের সহায়তা করেছিল। হানিফ আগের দিন রাতে নেতাকর্মীদের মজলুম সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমানকে হত্যার নির্দেশ দেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক যুবলীগ নেতা জানিয়েছেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ১০ অক্টোবর আমার দেশ সম্পাদক এ বিষয়ে থানায় মামলা করেন। অথচ এ মামলার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও একজন আসামিও গ্রেফতার হয়নি।

আমার দেশ সম্পাদকের দায়ের করা মামলার অগ্রগতি জানতে গত শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি তিনি। পরে মোবাইলে আমার দেশ-এর পরিচয় দিয়ে খুদেবার্তা পাঠালেও তার উত্তর দেননি পুলিশ সুপার।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের দুর্নীতি নিয়ে নিউজ করায় স্থানীয় সাংবাদিক মুন্সি শাহিন আহমেদ জুয়েল ও অঞ্জন শুভর নামে মামলা দেওয়া হয়। হানিফের স্বার্থে আঘাত করায় তাদের বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন তিনটি মামলা দেওয়া হয়। এছাড়া হানিফের পরিচিতজনের অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় মুন্সি শাহীন আহমেদ জুয়েল ও গ্লোবাল টিভির কুষ্টিয়া প্রতিনিধি সনি আজিম এখনো হাজিরা দিচ্ছেন খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে কুষ্টিয়ায় সাংবাদিকদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটলেও বিচার হয়নি কোনো ঘটনার।

২০২৩ সালের ২০ অক্টোবর কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হন ছয় সাংবাদিক। এ সময় তাদের স্পিডবোট থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে বালু উত্তোলনকারী আওয়ামী লীগ নেতা হান্নান মণ্ডলের পোষা সন্ত্রাসীরা। সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকায় পদ্মা নদীতে এ ঘটনা ঘটে।

২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিজ বাড়িতে ঢোকার সময় হামলার শিকার হন ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের দৌলতপুর উপজেলা প্রতিনিধি শহিদুল ইসলাম সোহাগ। দৌলতপুরের তৎকালীন সংসদ সদস্যের পিএসের দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহের পরদিনই হামলার শিকার হন তিনি।

জানা গেছে, মাহবুব-উল আলম হানিফের ইশারায় তার অনুগতরা সাংবাদিকদের দমন করতে মামলাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে বারবার। এমনকি হানিফের তোষামোদকারী কতিপয় সাংবাদিক নামধারী দলীয় ক্যাডারকে দিয়ে মিডিয়ার মালিক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিল-মিটিং করানো থেকে শুরু করে পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা ও মিথ্যা মামলা দেওয়ার নজিরও আছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা অথবা মামলার ক্ষেত্রে পুলিশও সহায়তা করেছে। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী নেতা, শেখ হাসিনার বেয়াই মাহবুব-উল আলম হানিফ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের ভয়ে জেলার গণমাধ্যমকর্মীরা সব সময় তটস্থ থাকতেন।

এ ব্যাপারে নির্যাতনের শিকার সাংবাদিক হাসান আলী দৈনিক টার্গেটকে বলেন, বিগত আওয়ামী সরকার ও দলটির নেতা এবং পুলিশের বিভিন্ন দুর্নীতি-অপকর্মের নিউজ ও অপকর্মের খোঁজ-খবর নেওয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে অন্যজনকে দিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করায় এবং আমাদের কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি আরও বলেন, এই সরকারের কাছে আমাদের দাবি- এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক। ২০১৭ সাল থেকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল ও খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনালে ঘুরতে ঘুরতে আমরা ক্লান্ত। একইসঙ্গে সরকারের কাছে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সুষ্ঠু কর্মক্ষেত্র তৈরির দাবি করেন তিনি।

সাংবাদিক মুন্সী শাহিন আহমেদ জুয়েল দৈনিক টার্গেটকে বলেন, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আমার সম্পাদনায় পরিচালিত ‘ভয়েজ অব কুষ্টিয়া’ নামের নিউজ পোর্টালে নিউজ করি। ওই নিউজ করার পর মাহবুব-উল আলম হানিফ ও তার ভাই আতার রোষানলে পড়ি আমরা। সম্ভবত ২০২১ সালের করোনাকালে ওই নিউজ প্রকাশিত হয়। তদন্ত শেষে পাঁচ সদস্যের ওই কমিটি ১২ বিষয়ে অনিয়ম চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কিছু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। বিভিন্নভাবে তিনটি মামলা হয় আমাদের বিরুদ্ধে। একটি মামলায় আমরা দুজন ২১ দিন কারাগারে ছিলাম। পরে হানিফ-ঘনিষ্ঠ বন্যা খাতুন আয়াতের বিরুদ্ধে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিউজ করি। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হানিফ কথিত সাংবাদিক রাশেদুল ইসলাম বিপ্লবের মাধ্যমে আমার (জুয়েল) ও সাংবাদিক সনি আযমের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা করায়। ওই মামলায় এখনো খুলনার সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে হাজিরা দিচ্ছি আমরা। তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্টের পতনের পর এই সরকার সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করবে বলে আমরা আশা করি।

সাংবাদিক গুম ও হত্যা

২০২২ সালের ৩ জুলাই রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের সিঙ্গার মোড় এলাকা থেকে নিখোঁজ হন সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল। এ ঘটনায় কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করে তার পরিবার। পরে ৭ জুলাই দুপুরে কুমারখালী পৌরসভার তেবাড়িয়া এলাকায় নির্মাণাধীন শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতুর নিচে গড়াই নদী থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় রুবেলের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। তার পরনের জামা-কাপড় ও মানিব্যাগে থাকা পরিচয়পত্র দেখে লাশ শনাক্ত করে পরিবারের লোকজন। ৮ জুলাই রুবেলের দাফন শেষে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে কুমারখালী থানায় মামলা দায়ের করেন রুবেলের চাচা মিজানুর রহমান। মামলাটি আজও পুলিশের খাতায় ক্লুলেস! তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হানিফের ঘনিষ্ঠ এক ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য জেনে যাওয়ায় সংবাদ প্রকাশের আগেই রুবেলকে হত্যা করা হয়। আর এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৎকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাংবাদিক হাসিবুর রহমান রুবেল কুষ্টিয়া জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় দৈনিক কুষ্টিয়ার খবর পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আলোচিত ওই হত্যা মামলার বিষয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর রাতে দৈনিক টার্গেটকে তার চাচা মিজানুর রহমান জানান, দীর্ঘদিনেও মামলাটির কোনো অগ্রগতি হয়নি। রুবেল হত্যার সঙ্গে কুষ্টিয়ার তৎকালীন সরকারি দলের অনেক বড় নেতা জড়িত। সরকার বদলেও আতঙ্কের কারণে সেটা এখনও প্রকাশ করা যাচ্ছে না। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

নাটের গুরু হানিফ

ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ মুখে মিডিয়ার স্বাধীনতার কথা বললেও শুরু থেকেই কুষ্টিয়ার সাংবাদিকদের টুটি চেপে ধরেছিলেন। উন্নয়ন প্রকল্পের অনিয়ম ও দলীয় কোনো নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করলেই অনুগতদের দিয়ে মামলা ঠুকে দিয়ে জেলে ভরার ব্যবস্থা করতেন তিনি। এমনকি সাংবাদিকদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে থানায় আটকে রেখে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন এই নেতা। কেউ কেউ নির্যাতনের ভয়ে তার বাড়িতে গিয়ে বসে থাকতেন। তার প্রশংসা করে বক্তব্য রাখতেন। তার ও তার অনুগতদের বিরুদ্ধে নিউজ প্রকাশ করলেই জামায়াত-বিএনপি তকমা দিয়ে তাকে হয়রানি করা হতো। এমন ঘটনা অহরহ ঘটেছে। হানিফ দলবাজ সাংবাদিকদের সঙ্গে নিয়ে চলতেন। এর বাইরে অন্য সাংবাদিকদের শত্রু হিসেবে মনে করতেন। তাই প্রতিটি সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনার সঙ্গে তার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদত আছে বলে ভুক্তভোগী গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগ। হানিফ ও তার ভাই আতা বর্তমানে পলাতক থাকায় তাদের মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

হানিফের অপকর্মের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. আমিনুল হক রতন দৈনিক টার্গেটকে বলেন, ’আপাতত এই মূহুর্তে আমরা মন্তব্য করতে চাই না। আমরা এখন একটা কান্তিকাল কাটাচ্ছি।’