তামাক ছেড়ে পান চাষে ভাগ্য ফিরলো কৃষকদের

  • দৈনিক টার্গেট
  • প্রকাশ: ০১:৫৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
  • ৬৮ বার পঠিত হয়েছে

অতিথি আপ্যায়নে বাঙালি সমাজে বাটাভর্তি পান একটি বিশেষ অনুষঙ্গ। খাওয়া-দাওয়া শেষে রসনাতৃপ্তির জন্য অনেকের কাছে এটি অত্যাবশ্যকীয়। পরিশেষে এক খিলি পান না দিলে যেন অপূর্ণতা রয়ে যায়।

দেশ-বিদেশে রয়েছে রসালো মিঠা জাতের পানের ব্যাপক সমাদর। কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের কৃষকরা পান চাষে ঝুকে পড়েছেন। বিষবৃক্ষ তামাক ছেড়ে মিঠা জাতের ১২ মাসি পান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন মাগুড়া ও গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, তামাকখ্যাত ভূমিগুলোতে একের পর এক শোভা পাচ্ছে পানের বরজ। ঘোমটাপরা নববধূর মতো চারদিক নেট জালের ছাউনি, ছনকাশ ও পাটকাঠি দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর ভেতরে ছায়াযুক্ত ও মনোরম পরিবেশে লকলকে বেড়ে উঠছে লতানো পান গাছ। আর সারিবদ্ধভাবে থাকা বাঁশ ও পাটকাঠির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বাড়ন্ত গাছগুলোর ডগায় ডগায় দুলছে গাঢ় সবুজ রংয়ের পান পাতা। নিবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের আরাজি চাঁদখানা গ্রামের মিথুন চন্দ্র রায় ৩০ শতাংশ ও তার বড় ভাই দিলিপ চন্দ্র ১৫ শতাংশ, দলিরাম ঠাকুরপাড়া গ্রামের অখিল চন্দ্র ২৫, মাগুড়া ইউনিয়নের ফুলের ঘাট গ্রামের মঞ্জু ২৫, মোজাফফর হোসেন ২২, জাফরুল হক ২৫, শামসুল হক ৩৩, কালটু মিয়া ১৫ শতাংশ জমিতে ৬ বছর ধরে পান চাষ করছেন।

এক সময় ওইসব জমিতে ছিল তামাক চাষের আগ্রাসন। এখন সেই জমিতে একের পর এক গড়ে উঠছে পানের বরজ। একবার রোপণ করলে ২০ থেকে ২৫ বছর ফলন পাওয়া যায়। চারা রোপণের প্রথম পর্যায়ে মাটি উঁচুকরণ, বাঁশ ও বাঁশের কাঠি, খড়, নেট জাল, সুতা, স্প্রে মেশিন, সার, সেচব্যবস্থা, চারাসহ যাবতীয় খরচ হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। আর ১ বিঘায় প্রতি বছর পান পাতা বিক্রি করে আয় হয় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। এতে ভাগ্যবদল করে ফেলেছেন উপজেলার পান চাষিরা। ফলে চাষিদের জীবনে যেমন ফিরেছে স্বচ্ছলতা, তেমনি তামাকের নীল বিষ থেকে মুক্তি পেয়ে পরিবেশ ফিরে পেয়েছে তার নিজস্ব ভারসাম্য। তাদের উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এমন সফলতা দেখে অন্য কৃষকেরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

চাষিরা জানান, পান চাষে প্রথমে মাটি উঁচু করা, চারা লাগানো, সার, বাঁশ, নেট, শ্রমিকসহ এককালীন খরচ হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। পরে ৬ মাসের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। ৮০টা পানে ১ বিরা বা ১০০ ধরা হয়। বড় পান পাতা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। মাঝারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ছোট ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। বিঘাপ্রতি সপ্তাহে শতাধিক বিরা পানপাতা তোলা যায়। বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। পান নিয়ে বাজারে যেতে হয় না, পাইকাররা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। বিশেষ করে পানের বরজ হলো সঞ্চিত ক্যাশ ব্যাংক। যখন প্রয়োজন হয় বরজ থেকে পানপাতা তুলে নগদ অর্থে বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটানো যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, পান চাষ একটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক ফসল। প্রতিনিয়ত নগদ টাকা পাওয়ায় কৃষকরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অনেক পান চাষি আর্থিক দৈন্যতা ঘুচিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। নিয়মিত বরজ ভিজিট করে পান চাষিদের কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে ১২ হেক্টর জমিতে মিঠা জাতের পান চাষ হচ্ছে।

ছাত্র-জনতার বুলডোজারে গুঁড়িয়ে গেল ‘হাসিনার দ্বিতীয় কেবলা’

তামাক ছেড়ে পান চাষে ভাগ্য ফিরলো কৃষকদের

প্রকাশ: ০১:৫৫:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

অতিথি আপ্যায়নে বাঙালি সমাজে বাটাভর্তি পান একটি বিশেষ অনুষঙ্গ। খাওয়া-দাওয়া শেষে রসনাতৃপ্তির জন্য অনেকের কাছে এটি অত্যাবশ্যকীয়। পরিশেষে এক খিলি পান না দিলে যেন অপূর্ণতা রয়ে যায়।

দেশ-বিদেশে রয়েছে রসালো মিঠা জাতের পানের ব্যাপক সমাদর। কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের কৃষকরা পান চাষে ঝুকে পড়েছেন। বিষবৃক্ষ তামাক ছেড়ে মিঠা জাতের ১২ মাসি পান চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গত মঙ্গলবার সরেজমিন মাগুড়া ও গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, তামাকখ্যাত ভূমিগুলোতে একের পর এক শোভা পাচ্ছে পানের বরজ। ঘোমটাপরা নববধূর মতো চারদিক নেট জালের ছাউনি, ছনকাশ ও পাটকাঠি দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এর ভেতরে ছায়াযুক্ত ও মনোরম পরিবেশে লকলকে বেড়ে উঠছে লতানো পান গাছ। আর সারিবদ্ধভাবে থাকা বাঁশ ও পাটকাঠির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বাড়ন্ত গাছগুলোর ডগায় ডগায় দুলছে গাঢ় সবুজ রংয়ের পান পাতা। নিবিড় পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের আরাজি চাঁদখানা গ্রামের মিথুন চন্দ্র রায় ৩০ শতাংশ ও তার বড় ভাই দিলিপ চন্দ্র ১৫ শতাংশ, দলিরাম ঠাকুরপাড়া গ্রামের অখিল চন্দ্র ২৫, মাগুড়া ইউনিয়নের ফুলের ঘাট গ্রামের মঞ্জু ২৫, মোজাফফর হোসেন ২২, জাফরুল হক ২৫, শামসুল হক ৩৩, কালটু মিয়া ১৫ শতাংশ জমিতে ৬ বছর ধরে পান চাষ করছেন।

এক সময় ওইসব জমিতে ছিল তামাক চাষের আগ্রাসন। এখন সেই জমিতে একের পর এক গড়ে উঠছে পানের বরজ। একবার রোপণ করলে ২০ থেকে ২৫ বছর ফলন পাওয়া যায়। চারা রোপণের প্রথম পর্যায়ে মাটি উঁচুকরণ, বাঁশ ও বাঁশের কাঠি, খড়, নেট জাল, সুতা, স্প্রে মেশিন, সার, সেচব্যবস্থা, চারাসহ যাবতীয় খরচ হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। আর ১ বিঘায় প্রতি বছর পান পাতা বিক্রি করে আয় হয় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। এতে ভাগ্যবদল করে ফেলেছেন উপজেলার পান চাষিরা। ফলে চাষিদের জীবনে যেমন ফিরেছে স্বচ্ছলতা, তেমনি তামাকের নীল বিষ থেকে মুক্তি পেয়ে পরিবেশ ফিরে পেয়েছে তার নিজস্ব ভারসাম্য। তাদের উৎপাদিত পান স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এমন সফলতা দেখে অন্য কৃষকেরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

চাষিরা জানান, পান চাষে প্রথমে মাটি উঁচু করা, চারা লাগানো, সার, বাঁশ, নেট, শ্রমিকসহ এককালীন খরচ হয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। পরে ৬ মাসের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। ৮০টা পানে ১ বিরা বা ১০০ ধরা হয়। বড় পান পাতা ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। মাঝারি ৭০ থেকে ৮০ টাকা। ছোট ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি করা যায়। বিঘাপ্রতি সপ্তাহে শতাধিক বিরা পানপাতা তোলা যায়। বিক্রি করা হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। পান নিয়ে বাজারে যেতে হয় না, পাইকাররা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। বিশেষ করে পানের বরজ হলো সঞ্চিত ক্যাশ ব্যাংক। যখন প্রয়োজন হয় বরজ থেকে পানপাতা তুলে নগদ অর্থে বিক্রি করে সংসারের চাহিদা মেটানো যায়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, পান চাষ একটি দীর্ঘমেয়াদি লাভজনক ফসল। প্রতিনিয়ত নগদ টাকা পাওয়ায় কৃষকরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। অনেক পান চাষি আর্থিক দৈন্যতা ঘুচিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। নিয়মিত বরজ ভিজিট করে পান চাষিদের কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন ব্লকে ১২ হেক্টর জমিতে মিঠা জাতের পান চাষ হচ্ছে।