দেশের সংস্কারের কাজ শেষেই আগামী বছর ২০২৫ সালের শেষের দিকে কিংবা ২০২৬ এর শুরুর দিকে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে জানিয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর যদি এর সঙ্গে নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরো ৬ মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।
সোমবার সকাল ১০টায় মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত আগস্ট মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর জাতির উদ্দেশে এটি তার তৃতীয় ভাষণ।
প্রধান রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যেই প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমি সকল প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করে নির্বাচনের আয়োজন করার ব্যাপারেই বারবার আপনাদের কাছে আবেদন জানিয়ে এসেছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণেই আমাদেরকে যদি, আবার বলছি ‘যদি’, অল্পের কিছু সংস্কার করে ভোটারদের তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয় তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠান হয়তোবা সম্ভবনা হবে। আর যদিও এর সঙ্গেই নির্বাচনের প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনের সংস্কারে কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতেই এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই প্রত্যাশিতভাবের মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্ততপক্ষে আরো ৬ মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে।
ড. ইউনূস বলেন, আমাদের দেশের সংস্কারের যে আকাঙ্ক্ষা সেটি বাস্তবায়নের প্রতিটি কমিশনই আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচনের ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধানের সংস্কার কমিশনের কথা আমি একটু আলাদাভাবেই বলতে চাই, কেননা এই ২টি কমিশনের সুপারিশের ওপর প্রধানত নির্ভরযোগ্য করছে আমাদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি ও তারিখ।
জাতির উদ্দেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, এখন থেকে সবাই মিলে এমন একটা ঐতিহ্যের সৃষ্টি করতে পারি যে, স্থানীয় নির্বাচন সহ সকল নির্বাচনের সকল কেন্দ্রেই প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশের এর কাছাকাছি সংখ্যায় ভোটদানের নিশ্চিতভাবেই করবে। এটা নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সাহস করতে পারবে না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ প্রসঙ্গেই বড় খবর হচ্ছে প্রধান নির্বাচনী কমিশনারসহ নির্বাচনের কমিশন গঠন করা হয়ে গেছে। কমিশনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। এখন থেকেই তাঁদের হাতে দায়িত্ব ন্যস্ত হলো ভবিষ্যৎ সরকার গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করার। তারা তাদের প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। তাদের হাতে অনেক কাজ।
ড. ইউনূস বলেন, প্রথমে সবচেয়ে বড় কাজ ভোটার তালিকা নতুন করে হালনাগাদ করা। এটা এমনিতেই কঠিন কাজ। এখন কাজটা আরও কঠিন হলো এজন্য যে, গত তিনটা নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ ছিল না। ভোটার তালিকা যাচাই করার সুযোগ হয়নি কারোর। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছে তাদের সবার নাম ভোটার তালিকায় তোলা নিশ্চিত করতে হবে। এটা একটা বড় কাজ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর এখানে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই। দীর্ঘদিন পর এবার বহু তরুণ-তরুণী জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দেবে। অতীতে তাদেরকে সে অধিকার এবং আনন্দ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। তাই এবারের নির্বাচনে তাদের ভোটদান একটি স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। এই অভিজ্ঞতাকে মসৃণ করার সমস্ত আয়োজন করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তরুণ ভোটাররা শতকরা ১০০ ভাগের কাছাকাছি সংখ্যায় ভোট দিয়ে একটি ঐতিহ্য সৃষ্টি করুক। নির্বাচন কমিশন এবং সকল সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলের প্রতি আমার আহ্বান সবাই মিলে আমরা যেন এই লক্ষ্য অর্জনে নানা প্রকার সৃজনশীল কর্মসূচি গ্রহণ করি।
নতুন ভোটারদের ছাড়াও যাদের আগে থেকেই ভোটারদের তালিকায় নাম থাকার কথাও ছিল তারা ভোটারদের তালিকায় আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবেই। বিশেষ্য মনোযোগে ভুয়া ভোটারদেরকে তালিকা থেকেই বের করে দিতে হবে- জাতির উদ্দেশে বলেন তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে আমরা এ ব্যাপারে অনেকবার আশ্বাসের কথা শুনেছি। এই সরকারের আমলে এটা যেন প্রথমবারের মতো বাস্তবায়িত হয় এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। এর জন্য একটা নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা করতে হবে।
তিনি বলেন, সবকিছুই সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এর সঙ্গে যদি আমরা নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে চাই, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করতে চাই, তাহলে প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিস্তৃতি ও গভীরতা অনুসারে নির্বাচন কমিশনকে সময় দিতে হবে।