Site icon দৈনিক টার্গেট

শীতকালের ফজিলত

শীতকাল আসলে আমাদের প্রস্তুতি শুরু হয় শীতের পোশাক ক্রয় ও শীতের পিঠা পুলি খাওয়াকে কেন্দ্র করেই। কিন্তু রাসুল (সাঃ) এবং সাহাবাগন (রাঃ) শীতকাল আসলেই অন্যরকম প্রস্তুতি নিতেন।

হজরত ওমর (রা.) বলেছেন, ‘শীতকাল হলো ইবাদতকারীদের জন্য গনিমতস্বরূপ।’ শীত তো এমন গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ), যা কোনো রক্তপাত কিংবা চেষ্টা ও কষ্ট ছাড়াই অর্জিত হয়। সবাই কোনো ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এ গনিমত স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাভ করে এবং কোনো প্রচেষ্টা বা পরিশ্রম ব্যতিরেকে তা ভোগ করে।

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘শীতকাল হচ্ছে মুমিনের বসন্তকাল।’

(মুসনাদে আহমাদ)।

বায়হাকির বর্ণনায় রয়েছে, ‘শীতের রাত দীর্ঘ হওয়ায় মুমিন রাত্রিকালীন নফল নামাজ আদায় করতে পারে এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখতে পারে।’

শীতকাল এলে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলতেন, ‘হে শীতকাল! তোমাকে স্বাগত! শীতকালে বরকত নাজিল হয়; শীতকালে রাত দীর্ঘ হওয়ায় নামাজ আদায় করা যায় এবং দিন ছোট হওয়ায় রোজা রাখা যায়।’

হজরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) এর মৃত্যুর সময় তাঁকেই তাঁর কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করা হলেই তিনি বলছেন, ‘আমি মৃত্যুর ভয়ে কান্না করছিনা; বরং (রোজা রেখে) গ্রীষ্মের দুপুরের তৃষ্ণার্ত, শীতের রাতের নফল নামাজ এবং ইসলামের আসনগুলোতে হাজির হয়ে আলেমদের সোহবত হারানোর জন্য

আমি কান্না করছি।’

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘নবী করিম (সা.) বলেছেন: যদি কোনো তীব্র ঠান্ডার দিন আল্লাহর কোনো বান্দা বলে, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই), আজকের দিনটি কতই না শীতল! হে আল্লাহ! জাহান্নামের জামহারি থেকে আমাকে মুক্তি দিন।” তখন আল্লাহ জাহান্নামকে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আমার এক বান্দা আমার কাছে তোমার জামহারি থেকে আশ্রয় চেয়েছে। আমি তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমি তাকে আশ্রয় দিলাম।’

সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, জামহারি কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘জামহারি এমন একটি ঘর যাতে অবিশ্বাসী, অকৃতজ্ঞদের নিক্ষেপ করা হবে এবং এর ভেতরে তীব্র ঠান্ডার কারণে তারা বিবর্ণ হয়ে যাবে।’ (আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইল: ৩০৬)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলছেন, ‘৩টি আমল পাপ মোচন করেন সংকটকালীন দান, গ্রীষ্মের রোজা ও শীতের অজু।’ (আদ দোয়া লিত তাবরানি: ১৪১৪)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের জানাব না কিসে তোমাদের পাপ মোচন হবে এবং মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে?’

সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘অবশ্যই! হে আল্লাহর রাসুল (সা.)!’ তিনি বললেন, ‘শীতের কষ্ট সত্ত্বেও ঠিকভাবে অজু করা।’ (মুসলিম: ২৫১; তাফসিরে কুরতুবি)।

শীতকাল আগমন করলে উবাঈদ বিন উমাঈর (রা.) বলতেন, ‘হে কুরআনের ধারক! তোমাদের রাতগুলো তিলাওয়াতের জন্য প্রলম্বিত করা হয়েছে, অতএব তা পড়তে থাকো। আর রোজা রাখার জন্য তোমাদের দিনগুলো সংক্ষেপিত করা হয়েছে, তাই বেশি বেশি রোজা রাখো।’

হজরত ওমর (রা.) তাঁরই ছেলের উদ্দেশেই বললেন, ‘শীতের দিনে ভালোভাবেই অজু করা বড় গুরুত্বপূর্ণ ও সওয়াবের কাজ।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন প্রচন্ড শীতের ভিতর যারা কষ্ট পাচ্ছে তোমরা তাদেরকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করো শীতের পোশাক প্রদান করো তাহলে তোমাদেরকে জাহান্নামের কষ্টকে রেহাই দিবেন। (বুখারী)

আল্লাহ তাআলা যেন এবারের শীতকালটিকে ইবাদাত দ্বারা পুর্ণ করার তৌফিক দান করেন আমাদেরকে।

Exit mobile version